ই-কমার্স কি ধরনের ব্যবসা এ সম্পর্কে আমাদের অনেকের মধ্যেই ধারণা নেই। ই -কমার্স ব্যবসার মাধ্যমে যে বাংলাদেশের হাজার হাজার তরুণ নতুন সম্ভাবনা দেখছে তা অনেকেই জানেন না। তাই আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে ই-কমার্স ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করব। আজকে আমরা আলোচনা করব ই-কমার্স ব্যবসার ইতিহাস ই-কমার্স ব্যবসার সম্ভাবনা এবং সুবিধা অসুবিধা।
আপনি যদি একজন তরুণ উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন এবং ই-কমার্স ব্যবসা নিয়ে কাজ করতে চান তাহলে আপনার জন্য আমাদের এই কন্টেন্টটি অত্যন্ত মূল্যবান। তাই আসুন সম্পন্ন কনটেন্টটি মনোযোগ সহকারে করার চেষ্টা করি।
ই-কমার্স ব্যবসা বলতে কী বোঝায়
ই-কমার্স বলতে অনলাইনকে ব্যবহার করার মাধ্যমে ব্যবসা করার সিস্টেমকে বোঝায়। অর্থাৎ অনলাইনের মাধ্যমে আপনার পণ্য কাস্টমারের কাছে বিক্রি করাকেই মূলত ই-কমার্স ব্যবসা বলে।ই-কমার্স ব্যবসা গুলো পূর্বের দিকে ধীরগতি থাকলেও করোনার সময়ে বৃহত্তর অগ্রগতি নিয়ে আসে। এবং যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। পূর্বের দিনে মানুষ অনলাইনে পণ্য কেনা সম্পর্কে জানত না তবে ইন্টারনেটের ব্যবহারের কারণে এখন মানুষ ঘরে বসে পণ্য কেনাবেচা করতে পারছে। এবং অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে এ সকল ব্যবসা সিস্টেমকে আমরা ই-কমার্স ব্যবসা বলে থাকি।
ই-কমার্স ব্যবসার ইতিহাস
ই-কমার্সের যাত্রা সর্বপ্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৬০ সালে। অনলাইনের বিশাল বিস্তারের ফলে ধীরে ধীরে ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। তবে ১৯৫৫ সালের দিকে আমাজন এবং ইবাই নামে দুটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট যাত্রা শুরু করার মাধ্যমে নতুন একটি অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়। আমাজন প্রথম দিকে বই বিক্রি করা শুরু করে এবং তারা প্রায় ১০ লক্ষের বেশি বই বিক্রি করে জনপ্রিয়তা লাভ করে।ই-কমার্সের প্রকারভেদ
ই-কমার্স কে সাধারণভাবে আমরা চারটি ভাগে ভাগ করে থাকি। এগুলো মূলত পণ্য লেনদেন পণ্য ধরন এবং বাজারজাতকরণের উপর নির্ভর হয়।- ভোক্তা থেকে ব্যবসা
- ব্যবসা থেকে ব্যবসা
- ভোক্তা থেকে ভোক্তা
- ব্যবসা থেকে ভোক্তা
বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করার গাইড লাইন
ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করার আগে বেশ কিছু বিষয় সম্পর্কে জানাটা অত্যন্ত জরুরি। কারণ ই-কমার্স ব্যবসাটা মূলত অনলাইন ভিত্তিক। আপনার যদি অনলাইন সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে ধারণা না থাকে তাহলে অবশ্যই অনলাইন বিষয়টাকে ভালোভাবে বুঝতে হবে। এছাড়াও পণ্য সংগ্রহ পণ্য ডেলিভারি মার্কেটিং সহ অনেক ধরনের বিষয় আছে যা নিচে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো।পণ্য নির্বাচন : প্রথমে আপনাকে একটি পণ্য নির্বাচন করতে হবে যে পণ্যটি নিয়ে আপনি আপনার ব্যবসা শুরু করতে চান।
লোকেশন: আপনি কোন লোকেশনে ব্যবসাটি শুরু করতে চান এবং আপনার পণ্যটি কোন লোকেশনে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হবে সে সম্পর্কে জানতে হবে।
পণ্য সংগ্রহ: আপনার নির্বাচনকৃত পণ্যগুলো কম খরচে কোন মাধ্যমে সরবরাহ করা যায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
রেজিস্ট্রেশন: আপনার ব্যবসাটাকে নি`জের নামে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এক্ষেত্রে উপজেলা অথবা সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।
ওয়েবসাইট অথবা পেজ: অনলাইনে পণ্যর মার্কেটিং করার জন্য একটি ওয়েবসাইট অথবা ফেসবুক পেজ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আপনি কম সময়ে অধিক মানুষের কাছে আপনার পণ্য সম্পর্কে তথ্য দিতে পারবেন।
ডিসকাউন্ট: বিভিন্ন ধরনের উৎসব এবং ছোটখাটো ইভেন্টের সময় আপনার পণ্যের ডিসকাউন্ট দিন। এতে করে গ্রাহকদের মধ্যে আকর্ষণ বৃদ্ধি পাবে।
রিভিউ: পণ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে রিভিউ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। আপনার গ্রাহকদের সাথে নিয়মিত কথা বলুন সম্পর্ক ভালো বজায় রাখুন এবং তাদের থেকে রিভিউ নেওয়ার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে নতুন কাস্টমার গুলো তাদের রিভিউ দেখে পণ্য ক্রয় করবে।
বাংলাদেশে ই-কমার্সের সুবিধা
ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে বেশ কিছু জিনিস সম্পর্কে পূর্ণ অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। এবং এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পূর্ণ এবং স্থান। তাই আপনি কোন দেশ থেকে কি ধরনের পণ্য নিয়ে ইকমার্স ব্যবসা পরিচালনা করতে চান সেটার উপরে সুবিধা অসুবিধা নির্ভর করে। আসুন জেনে নেই বাংলাদেশ থেকে ই-কমার্স ব্যবসার প্রধান প্রধান কিছু সুবিধা।- ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা করার কারণে পন্য খুব দ্রুত ক্রয় বিক্রয় এবং বাজারজাত করা যায়।
- ই-কমার্স এর ব্যবসা করলে সকল পণ্যর আপডেট তথ্যগুলো জানা যায়। যে কোন পণ্যের দাম কম হলো সেগুলো সহজেই ক্রয় করে লাভ করা যায়।
- ই-কমার্সের খুব সহজে ব্যবসা শুরু করা যায় এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
- সবচেয়ে কম খরচে উন্নতমানের সেবা পাওয়া যায়।
- ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে খুব সহজে ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছে যায়
- পণ্যের রিভিউ করার মাধ্যমে ক্রেতাকে পণ্যের মান সম্পর্কে জানানো যায় এবং নিজের পূর্ণ সম্পর্কে মার্কেটিং করা যায়।
বাংলাদেশ ই-কমার্স ব্যবসায় অসুবিধা
ই-কমার্স ব্যবসায়ী সবথেকে বেশি সুবিধা পেলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কিছুটা অসুবিধা পেতে হয় আমরা সে সকল অসুবিধা গুলোর নিচে দেওয়া হল:অতিরিক্ত অর্ডার সরবরাহের কারণে সঠিক সময়ে পণ্য ডেলিভারি করতে সমস্যা হয়
যখন কোন পণ্যের অনেক দূরবর্তী অর্ডার হয় তখন তার ডেলিভারি দিতে সমস্যা হয়
লেনদেন করার জন্য নিরাপত্তা অনেক বড় একটি সমস্যা হয় কাজ করে
অনেক বেশি প্রতারক থাকে
যিনি উদ্যোক্তা তার যথেষ্ট প্রযুক্তিগত জ্ঞান না থাকার কারণে সঠিক কার্যক্রম গুলো ব্যাহত হয়
বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার সম্ভাবনা
আপনি যদি ভেবে থাকেন যে বাংলাদেশী ই-কমার্স ব্যবসা করে কি সত্যিই লাভবান হওয়া যায়। এক্ষেত্রে আমরা আপনাকে বলব বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে ব্যবসার সব থেকে সেরা প্ল্যাটফর্ম হল ই-কমার্স। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে ডিজিটাল উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে।তথ্য প্রযুক্তির দিকে ব্যাপকভাবে অগ্রগতি হচ্ছে আমাদের দেশটির। ইতিমধ্যেই প্রায় দশ হাজারের মতো ই-কমার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের চালু হয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক ই কমার্স ব্যবসা শুরু হয়েছে। তাই সুদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার অগ্রগতি অনেক সম্ভাবনাময়।
ই-কমার্স ব্যবসার নিয়ম
প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষকে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রেও তা ভিন্ন নয়। ইকমার্স ব্যবসা শুরু করার আগে বেশ কিছু বিষয় সম্পর্কে জানতে হয় এবং সংগ্রহ করতে হয়। উক্ত বিষয়গুলো যদি আপনার ব্যবসায়িক মাধ্যম হিসেবে না রাখেন তাহলে আপনি অবৈধ হিসেবে গণ্য হবেন আসুন জেনে নেই সে সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে।ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ
আপনার ব্যবসাটি বড় হোক কিংবা ছোট আপনার ব্যবসার জন্য চাই একটি ট্রেড লাইসেন্স। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া যদি আপনি ব্যবসা পরিচালনা করেন তাহলে তা অবৈধ বলে গণ্য হবে এবং আপনাকে জেল ও জরিমানা করা হবে।
ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করার জন্য আপনাকে আপনার নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ অথবা পৌরসভা তে যেতে হবে। মনে রাখবেন ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করা মানেই একটি প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রি মালিক আপনি।
ই -টিন সার্টিফিকেট তৈরি
এটি কি বলা হয় ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার ( Tax Identification Number ) । এটি সংগ্রহ করার জন্য কোন দপ্তরে যাবার প্রয়োজন নেই সরাসরি অনলাইন থেকে নিজে নিজেই সংগ্রহ করতে পারবেন। আমরা যে ধরনের ব্যবসায়ী পরিচালনা করি না কেন সরকারকে একটি ট্যাক্স দিতে হয়।আপনি যদি সরকারকে ট্যাক্স না দেন তাহলে আপনার বিরুদ্ধে সরকার অভিযান চালিয়ে জরিপানা করবে। তাই ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই টিম সার্টিফিকেট তৈরি করা জরুরী।
কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে মূলত এই দুইটি বিষয়ে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এগুলোর পাশাপাশি আরো বেশ কিছু বিষয় আছে যা মাথায় রাখতে হয় নিচে তা উল্লেখ করা হলো।
পন্যের মূল্য তালিকা তৈরি করতে হবে
মাদক দ্রব্য বিক্রয় থেকে বিরত থাকতে হবে
গ্রাহকের তথ্য অনুমতি নিয়ে সংগ্রহ করতে হবে
ওষুধ জাতীয় পণ্য বিক্রি করতে হলে ড্রাগ লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে
ক্যাশ অন ডেলিভারি সঠিক সময়ে দিতে হবে
উপসংহার
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের ব্যবসা গুলো যেভাবে ই-কমার্স নির্ভর হচ্ছে তাতে করে সুদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অন্যতম ভূমিকা পালন করবে বলে মনে হয়। এবং উক্ত খাতির মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান হবে তাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সবাইকে সচেতন করতে হবে ই-কমার্স ব্যবসা করার জন্য। সরকারিভাবে যদি এই খাতটিকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রণোদনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে অনেক তরুণ যুবক সফলতার দেখা পাবে।



.jpg)
0 মন্তব্যসমূহ